Wednesday 14 June 2023

Summary of Lecture of 2022

 

Summary of Lecture 01


هُوَ الَّذِيْ بَعَثَ فِى الْاُ مِّيّٖنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَا لْحِكْمَةَ وَاِ نْ كَا نُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ


"তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে পাঠিয়েছেন তাঁর রসূলকে তাদেরই মধ্য হতে, যে তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে, তাদেরকে পবিত্র করে, আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় অথচ ইতোপূর্বে তারা ছিল স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত।"

Al-Jumu'ah 62: Verse 2

Ali 'Imran 3: Verse 164

Al-Baqarah 2: Verse 151

Al-Baqarah 2: Verse 129


কুরআন কারীমে বারংবার ইরশাদ করা হয়েছে যে, উম্মাতের ‘তাযকিয়া’ই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মূল মিশন এর একটি এবং ‘তাযকিয়ায়ে নাফস’-ই সফলতার মূল।


তাযকিয়া’-র ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারী বলেন, তাযকিয়া শব্দটি ‘যাকাত’ থেকে গৃহীত। যাকাত অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। এ সকল আয়াতে ‘তাযকিয়া’ অর্থও পবিত্রতা ও বৃদ্ধি।


জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব। বুখারী(হাদীসের অংশ)


মনকে শিরক, কুফর, আত্মপ্রেম, কুরআন-সুন্নাহের বিপরীতে নিজের পছনদকে গুরুত্ব প্রদান, হিংসা, অহঙ্কার, লোভ, রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি থেকে হৃদয়কে মুক্ত ও পবিত্র করতে হবে। এগুলি বর্জনীয় মানসিক কর্ম।


মনকে ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, আল্লাহ-ভীতি, আল্লাহর রহমতের আশা, আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্টি, নির্লোভতা, সকলের প্রতি ভালবাসা, কল্যাণকামনা ইত্যাদি বিষয় দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে। এগুলি করণীয় মানসিক কর্ম।


Summary of Lecture 02


یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡکُمۡ مَّوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ شِفَآءٌ لِّمَا فِی الصُّدُوۡرِ ۬ۙ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ

হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।ইউনুস-৫৭


এমন বিষয় বর্ণনা করা, যা শুনে মানুষের অন্তর কোমল হয় এবং আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়ে পড়ে। পার্থিব গাফলতীর পর্দা ছিন্ন হয়ে মনে আখেরাতের ভাবনা উদয় হয়।

কুরআনুল কারীমের দ্বিতীয় গুণ (وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ) বাক্যে বর্ণিত হয়েছে। شِفَاءٌ অর্থ রোগ নিরাময় হওয়া আর صُدُوْرٌ হলো صَدْرٌ এর বহুবচন, যার অর্থ বুক। আর এর মর্মার্থ অন্তর।

কুরআনুল কারীমের তৃতীয় গুণ হচ্ছেঃ কুরআন হলো হেদায়াত।

কুরআনুল করীমের চতুর্থ গুণ হচ্ছেঃ কুরআন হলো রহমত। যার এক অর্থ হচ্ছে নে’আমত।


Summary of Lecture 03


শয়তান মানবজাতির জন্য অনেক বড় একটি ফিতনা ও কেয়ামত পর্যন্ত চলমান এক যুদ্ধের সেনাপতি ।তাই কোরআনে তার ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে আমাদের সাবধান করা হয়েছে।


اِنَّ الشَّيْطٰنَ لَـكُمْ عَدُوٌّ فَا تَّخِذُوْهُ عَدُوًّا ۗ اِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَهٗ لِيَكُوْنُوْا مِنْ اَصْحٰبِ السَّعِيْرِ


"শয়ত্বান তোমাদের শত্রু, কাজেই তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর। সে কেবল তার দলবলকে ডাকে, যাতে তারা জ্বলন্ত অগ্নির সঙ্গী হয়।"

( Fatir 35: Verse 6)


দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য


-যা জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া


স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য


-কুফর ও শির্কে লিপ্ত করা

-গুনাহতে লিপ্ত করা

-মুমিনদের মাঝে ঘৃণা ও বিদ্বেষ তৈরি করা

-মন্দ ও অশ্লীল কাজ করানো এবং আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কথা বলা

-আল্লাহর আনুগত্যে বাধা প্রদান ও তার আনুগত্য করানো

-নেক আমল ধ্বংস করে দেওয়া

-মানসিক ও শারীরিক ভাবে মানুষের ক্ষতি করা


কৌশল সমূহ :

.কোরআনের সাথে দুরুত্ত্ব তৈরি করা

.খারাপ কাজকে সৌন্দর্য মন্ডিত করা (আদম আলাইহিস সালাম এর উদাহরণ)

.ভয় দেখায়

.সন্দেহ তৈরি করা

.নগ্নতার দিকে আহবান করে

.আল্লাহর স্মরন খেকে দুরে রাখা

. নামাজে মনোযোগ নষ্ট করা

.রাগ ও তাড়াহুড়া

.বিভেদ তৈরি করা

১০.দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি

১১.স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ

১২.মিথ্যা কামনা বাসনা

১৩.মানবিক দুর্বল জায়গায় আক্রমণ

১৪. আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কথা বলা

১৫. মৃত্যুর সময় পথভ্রষ্ট করা

১৬.কাজে গড়িমসি ও অলসতা

১৭.শয়তান ধাপে ধাপে কাজ করে

১৮.কল্যাণকামী হিসেবে আসে


শয়তান থেকে রক্ষার হাতিয়ার


.ঈমান ও তাকওয়াক্কুল

.ইখলাস

.আল্লাহর কাছে আশ্রয়

.কোরআন তেলাওয়াত ও যিকির

.ওজু সালাত

.তওবা ইস্তেগফার

.ঘরকে শয়তানের উপকরন দুর করা

.পরিবারকে রক্ষা করা

.শয়তানের বিরোধীতা করা

১০.দৃষ্টি অবনত করা

১১.অপচয় রোধ করা

১২.সাবধানতা ও সতর্কতা



Summary of Lecture 04


সূরাঃ ৩৫/ ফাতির

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ٝ وَ لَا یَغُرَّنَّکُمۡ بِاللّٰهِ الۡغَرُوۡرُ

হে মানুষ! আল্লাহর ওয়া‘দা সত্য, কাজেই পার্থিব জীবন কিছুতেই যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে; আর সেই প্রধান প্রতারক (শয়ত্বান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না

 কেননা পার্থিব জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়।  ৩:১৮৫

 কাফিরদের নিকট পার্থিব জীবন মোহনীয় করা হয়েছে ২:২১২

মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্ত্তপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ  ৩:১৪

 বল, ‘পার্থিব ভোগ সামান্য, :৭৭

আর পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করেছে তুমি তাদেরকে বর্জন কর। ৬:৭০

  তোমরা কি আখেরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ কর? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য। ৯:৩৮

অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন অতি নগণ্য বস্তু।১৩:২৬

 তারা আখিরাত অপেক্ষা দুনিয়ার জীবনকে বেশি ভালবাসে,১৬:১০৭

ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি পার্থিব জীবনের শোভা-সৌন্দর্য, ১৮:৪৬

তা পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু ও তার শোভা মাত্র ২৮:৬০

  আর দুনিয়ায় তোমার অংশের কথা ভুলে যেও না ২৮:৭৭

পার্থিব এ জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া কিছু নয়,২৯:৬৪

  কাজেই পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে আর প্রধান প্রতারক (শয়ত্বান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ্ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। ৩১:৩৩

 কাজেই পার্থিব জীবন কিছুতেই যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে; আর সেই প্রধান প্রতারক (শয়ত্বান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে।৩৫:

পার্থিব এ জীবন (অস্থায়ী) ভোগ্য বস্তু মাত্র, আর আখিরাতই হল চিরকালীন আবাসস্থল। ৪০:৩৯

 দুনিয়ার জীবনের (সামান্য) ভোগ্যবস্তু মাত্র। ৪২:৩৬

তোমরা জেনে রেখ, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার আর ধন-মাল ও সন্তানাদিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র, আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার বস্তু ছাড়া আর কিছুই না। ৫৭:২০

আর পার্থিব জীবনকে (পরকালের উপর) প্রাধান্য দিয়েছিল ৭৯:৩৮

 কিন্তু তোমরা তো দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দাও ৮৭:১৬



Summary of Lecture 05



 قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىهَا

নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। ৯১:

সূরাঃ ৬৪/ আত-তাগাবুন

  فَاتَّقُوا اللّٰهَ مَا اسۡتَطَعۡتُمۡ وَ اسۡمَعُوۡا وَ اَطِیۡعُوۡا وَ اَنۡفِقُوۡا خَیۡرًا لِّاَنۡفُسِکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِهٖ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

যারা অন্তরের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা পেল, তারাই সফলকাম। ৬৪:১৬



যারা সফল

-নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে

- অন্তরের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা পেল

- যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে।

-যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে

- আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও

-গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।

এবং তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছিল, যারা তদ্বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আখিরাতের প্রতি যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।

-যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে।

-আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ।

-আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়।

-আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী।

-আর আর যারা নিজদের সালাতসমূহ হিফাযত করে।যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান।

-যাদের পাল্লা ভারী হবে

- আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে ডাকা হয়, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম

-ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, আর আল্লাহর পথে নিজদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে

-তোমরা (আল্লাহর সংগে) যে সওদা করেছ

-তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে



যাতে সফল হতে পারো



- ধৈর্য অবলম্বন কর, দৃঢ়তা প্রদর্শন কর, নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে পারস্পরিক বন্ধন মজবুত কর এবং আল্লাহকে ভয় কর

- আল্লাহর নিকট তাওবাহ কর

  • আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর


Summary of Lecture 06


وَ لَنۡ تَرۡضٰی عَنۡکَ الۡیَهُوۡدُ وَ لَا النَّصٰرٰی حَتّٰی تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمۡ ؕ قُلۡ اِنَّ هُدَی اللّٰهِ هُوَ الۡهُدٰی ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَهۡوَآءَهُمۡ بَعۡدَ الَّذِیۡ جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَکَ مِنَ اللّٰهِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ

আর ইয়াহূদী ও নাসারারা কখনো তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ কর। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই হিদায়াত’ আর যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তার পর, তাহলে আল্লাহর বিপরীতে তোমার কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।  ২:১২০

কিন্তু পরে যখন তোমাদের নিকট কোন রাসূল - তোমাদের প্রবৃত্তি যা ইচ্ছা করতনা তা নিয়ে উপস্থিত হল তখন তোমরা অহংকার করলে, অবশেষে এক দলকে মিথ্যাবাদী বললে এবং একদলকে হত্যা করলে।২:৮৭

হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।  ৪:১৩৫

সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। ৫:৪৮



আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে ফয়সালা কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে।৫:৪৯

বল, ‘আমি তোমাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করি না, (যদি করি) নিশ্চয় তখন পথভ্রষ্ট হব এবং আমি হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হব না। ৬:৫৬

আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না এবং যারা তাদের রবের সমকক্ষ নির্ধারণ করে। ৬:১৫০


যার অন্তরকে আমি আমার যিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তি অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।১৮:২৮

 তুমি কি তাকে দেখনি, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার হবে ২৫:৪৩



 (হে দাঊদ), নিশ্চয় আমি তোমাকে যমীনে খলীফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার কর আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল। ৩৮:২৬

Whom Allah love or not

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ

নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন। :১৫৯

اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنۡ کَانَ خَوَّانًا اَثِیۡمًا

নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন না তাকে, যে খিয়ানতকারী, পাপী। :১০৭

وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الۡمُفۡسِدِیۡنَ

আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। :৬৪

اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না। :১৪১

اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ

নিশ্চয় তিনি পছন্দ করেন না সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে। :৫৫

اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الۡخَآئِنِیۡنَ

নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের পছন্দ করেন না। :৫৮

اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ خَوَّانٍ کَفُوۡرٍ

আল্লাহ কোন খিয়ানাতকারী, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। ২২:৩৮

اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ

নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ৩১:১৮

اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ

নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদের পছন্দ করেন না। ৪২:৪০

اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ

নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। :১৯০

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণকারীদেরকে ভালবাসেন। :১৯৫

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ

নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে। :২২২

وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ

আর আল্লাহ কোন অতি কুফরকারী পাপীকে ভালবাসেন না। :২৭৬

فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الۡکٰفِرِیۡنَ

তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না। :৩২

فَاِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَّقِیۡنَ

তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন। :৭৬

وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الصّٰبِرِیۡنَ

আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালবাসেন। :১৪৬



ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ

আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। :৪২

وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِیۡنَ

আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন। :১০৮

اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡتَکۡبِرِیۡنَ

নিশ্চয় তিনি অহঙ্কারীদের পছন্দ করেন না। ১৬:২৩

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ

নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন। ৪৯:

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ صَفًّا کَاَنَّهُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ

নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর। ৬১:

 

Behaviour of Muhammad (Peace be on him)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا ادۡخُلُوۡا فِی السِّلۡمِ کَآفَّۃً ۪ وَ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ

হে মু’মিনগণ! ইসলামের মধ্যে পূর্ণভাবে প্রবেশ কর এবং শায়ত্বনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আল বাকারা ২০৮ নং আয়াত

মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

-আকীদা-বিশ্বাস

-ইবাদত

-মআমালাত

-মুআশারাত

-আখলাক

وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ

আর নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। সুরা কলম (৬৮:)

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “মহৎ চরিত্র” বলে কুরআনের শিষ্টাচার বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ যেসব শিষ্টাচার কুরআন শিক্ষা দিয়েছে। [কুরতুবী]

এর অর্থ হল, এমন শিষ্টাচার, ভদ্রতা, নম্রতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিশ্বস্ততা, সততা, সহিষ্ণুতা এবং দানশীলতা ইত্যাদি সহ অন্য যাবতীয় চারিত্রিক ও নৈতিক গুণাবলী যার অধিকারী তিনি নবুঅতের পূর্বেও ছিলেন এবং নবুঅতের পর যা আরো উন্নত হয় ও সৌন্দর্য-সমৃদ্ধ হয়। আর এই কারণেই যখন আয়েশা (রাঃ) কে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি বলেন, كَانَ خُلُقُهُ القُرْآنَ অর্থাৎ, তাঁর চরিত্র ছিল কুরআন। (মুসলিমঃ মুসাফিরীন অধ্যায়) মা আয়েশার এই উত্তর خُلُقٍ عَظِيْمٍ এর উল্লিখিত উভয় অর্থেই শামিল।



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিল তার চরিত্র। [মুসনাদে আহমাদ: /৯১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তায় আল্লাহ তা'আলা যাবতীয় উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি। [মুসনাদে আহমাদ: /৩৮১, মুস্তাদরাকে হাকিম: /৬৭০]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেছেন, “আমি দশ বছর যাবত রাসূলুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো উহ! শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোন কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কোন কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? [বুখারী: ৬০৩৮, মুসলিম: ২৩০৯]

[আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে পথ চলছিলাম। তাঁর দেহে ছিল মোটা পাড়ের একখানা নাজরানী চাদর, বেদুঈন চাদর ধরে জোরে টান দিল। টানের চোটে নবী (সা.) উক্ত বেদুইনের বক্ষের কাছে এসে পড়লেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাঁধের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম, সে জোরে টানার কারণে তার কাঁধে চাদরের ডোরার ছাপ পড়ে গেছে। অতঃপর বেদুঈনটি বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলার যে সকল ধন-সম্পদ তোমার কাছে আছে, তা হতে আমাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দাও। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দিকে ফিরে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। এরপর তাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দান করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)

আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন এমন একটি মহিলা- যার মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল, সে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে আমার একটু প্রয়োজন আছে। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, হে অমুকের মা! যে গলিতেই তুমি আমাকে নিয়ে যেতে চাও, আমি তোমার কাজের জন্য সেথায় যেতে প্রস্তুত আছি। অতঃপর রাসূল (সা.) মহিলাটির সাথে কোন এক পথের পার্শ্বে নিরালায় কথাবার্তা বললেন, এমনকি সে তার প্রয়োজন সমাধা করে চলে গেল। (মুসলিম)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আমার কাছে খুব প্রিয়, যার চরিত্র ভালো। (বুখারী)

হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুশ্চরিত্র, মন্দ স্বভাব ও কঠোর ভাষা ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

আবুদ্ দারদা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মু’মিনদের পাল্লায় ভারী যে বস্তুটি রাখা হবে, তা হলো উত্তম চরিত্র। আল্লাহ তা’আলা অশ্লীলভাষী ও বাচালকে ঘৃণা করেন। (তিরমিযী;

আবূ সা’লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ)হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়তম ও আমার সবচেয়ে নিকটতম সেই ব্যক্তি হবে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে চরিত্রবান। আর আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও সবচেয়ে দূরতম সে ব্যক্তি হবে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে চরিত্রহীন, বেশি কথা বলে, অসতর্কভাবে যা-তা বলে এবং কথাবার্তায় নিজেকে বড় বলে প্রকাশ করে। (বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমান’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, দু’টো গহ্বর; একটি মুখ, অপরটি জননেন্দ্রিয়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]



আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মু’মিনগণ তাদের উত্তম চরিত্র দ্বারা রাতে ’ইবাদাতকারীর ও দিনে সায়িমের (রোযাদারের) মর্যাদা লাভ করে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]



আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাদাক্বাহ কোন মাল কমিয়ে দেয় না। মানুষকে ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহ ক্ষমাকারীর ইযযাত বৃদ্ধি করে দেন। যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করে আল্লাহ তাকে উঁচু করে থাকেন।[1]

ইবনু উমার (রাঃ) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজেরে মনেই নিজেকে বড় বলে জানে, চলার সময় অহংকার করে চলে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় থাকবেন।[1] বুখারী ৫৪৯, মুসলিম ৬২৩

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি হচ্ছে অতি ঝগড়াটে লোক বুখারী ২৪৫৭, ৭১৮৮, মুসলিম ২৬৬৮

আবূ দারদা (রাঃ) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেকী-বদী ওজনের সময় উত্তম চরিত্রের থেকে আর কোন বস্তু বেশি ভারী হবে না।[1] আবূ দাউদ ৪৭৯৯, তিরমিযী ২০০


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মু’মিনদের মধ্যে সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দরতম। আর তোমাদের উত্তম ব্যক্তি তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মীযানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই।[1] বুখারীর আদাবুর মুফরাদ, তিরমিযী, আহমাদ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যাকে নম্রতার মতো গুণ দান করা হয়েছে তাকে কল্যাণ দান করা হয়েছে। আর যাকে নম্রতার গুণ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার নেকীর পাল্লায় সবচেয়ে ভারী বস্তু হবে উত্তম চরিত্র। নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীলভাষী ও বাচাল লোককে পছন্দ করেন না -(তিরমিযী, আবু দাউদ)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। তারা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি, কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেনঃ সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ যার কোন গুনাহ নাই, নাই কোন দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মহমিকা ও কপটতা। হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ মুখ ও লজ্জাস্থান।















































পরিবারে আচরন

وَ عَاشِرُوۡهُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ

তাদের সাথে দয়া ও সততার সঙ্গে জীবন যাপন কর, যদি তাদেরকে না-পছন্দ কর, তবে হতে পারে যে তোমরা যাকে না-পছন্দ করছ, বস্তুতঃ তারই মধ্যে আল্লাহ বহু কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন। :১৯

অর্থাৎ তাদের সাথে উত্তম কথা বলবে। কথায়, কাজে, চলাফেরায় যতটুকু সম্ভব সৌন্দর্য রক্ষা করবে। যেমনটি তুমি তাদের কাছ থেকে আশা কর, তেমন ব্যবহারই করো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো ঐ ব্যক্তি যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম। [তিরমিযীঃ ৩৮৯৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক সৌন্দর্যের মধ্যে এটা ছিল যে, তিনি সদাহাস্য সুন্দর ব্যবহার করতেন। পরিবারের সাথে হাস্যরস, নরম ব্যবহার ইত্যাদি করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে কখনো কখনো দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। [দেখুন- আবু দাউদঃ ২৫৭৮, ইবন মাজাহঃ ১৯৭৯, মুসনাদে আহমাদঃ ৬/১২৯]

অর্থাৎ এমনও হতে পারে যে, ধৈর্যধারণ করে তাদের সাথে জীবনযাপন করলে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে আল্লাহ্ তা'আলা অনেক ভাল কিছু এর বিনিময়ে রেখেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ এর অর্থ হল স্বামী স্ত্রীকে ভালবাসবে, তারপর তাদের মধ্যে আল্লাহ সন্তান দান করবেন যে সন্তান তাদের মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিয়ে আসবেন বা স্বামীর মনে স্ত্রীর জন্য ভালবাসা তৈরী করে দিবেন। [তাবারী] এছাড়া হাদীসে রয়েছে,



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন পুরুষ কোন মুমিন নারীকে ঘৃণা করবে না। যদি তার কোন চরিত্রের কোন একটি দিক তাকে অসন্তুষ্ট করে, তবে অন্য দিক তাকে সন্তুষ্ট করবে। [মুসলিমঃ ১৪৬৯]





আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের জুতা নিজেই ঠিক করে নিতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং গৃহের কাজকর্ম করতেন, যেমন তোমাদের কেউ স্বীয় গৃহের কাজকর্ম করে থাকে। আয়িশাহ্ (রাঃ) এটাও বলেছেন যে, তিনি (সা.) অন্যান্য মানুষের মতো একজন মানুষই ছিলেন। নিজের কাপড়চোপড় হতে উকুন বাছতেন, নিজ বকরির দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই সম্পাদন করতেন। (তিরমিযী)



[আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)  অশালীন বাক্য উচ্চারণকারী, লা’নাতকারী এবং গালিগালাজকারী ছিলেন না। তিনি (সা.) যখন কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হতেন, তখন কেবল এতটুকুই বলতেন যে, তার কি হলো? তার ললাট ভূলুণ্ঠিত, ধূলিময় হোক।’ (বুখারী)

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার [রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে] প্রস্তাব করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কাফির মুশরিকদের ওপর অভিসম্পাত করুন। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, আমাকে অভিসম্পাতকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি, বরং আমাকে রহমতস্বরূপ পাঠানো হয়েছে। (মুসলিম)

আসওয়াদ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সা.) গৃহের ভিতরে কি কাজ করতেন? তিনি বললেন, তিনি (সা.) পারিবারিক কাজ করতেন। অর্থাৎ পরিবারের কাজ আঞ্জাম দিতেন। আর যখন সালাতের সময় হত তখন সালাতের উদ্দেশে বের হয়ে যেতেন। (বুখারী)







আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকৃতি-প্রকৃতি, স্বভাব-চরিত্র ও কাঠামো-অবয়বে; (অপর এক রিওয়ায়াতে আছে) আলাপ-আলোচনায় ফাতিমা (রাঃ) ছাড়া অন্য কাউকে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সদৃশ পাইনি। ফাতিমা (রাঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসতেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ফাতিমার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুম্বন করতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন। অনুরূপভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফাতিমা (রাঃ)-এর কাছে যেতেন, ফাতিমা (রাঃ) উঠে দাঁড়াতেন, তাঁর হাত ধরতেন, হাতে চুম্বন করতেন এবং নিজের বসার স্থানে তাঁকে বসাতেন। (আবূ দাঊদ)[1

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিই সর্বোত্তম মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। (তিরমিযী)[1]

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।[1] বুখারী ৬১১৪, মুসলিম ২৬০৯