১৯ আগস্ট ২০২২,চলমান বুক রিভিউয়ে আজকে আল্লাহ আমাকে যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ।
রিভিউ -৭
রাহে বেলায়াত বই পার্ট-৬
ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের rokomari.com এ বিক্রিত বই গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই হল রাহে বেলায়াত। আমি এই বইয়ে আলোচিত মৌলিক বিষয়গুলোর ছোট্ট একটি সামারি দেওয়ার চেষ্টা করছি আলহামদুলিল্লাহ। আগের ৬ টি পার্টে ১৬ টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছি,এই পার্ট পড়ার আগে ঐ পয়েন্ট গুলো পড়ার অনুরোধ করছি।
সালাত ও বেলায়েত অধ্যায় থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
১৭.সালাত ও জামাতের গুরুত্ব
সালাত:
--সালাতই সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির এবং সালাতই মুমিনের বেলায়াতের অন্যতম পথ। আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সরাসরি ও সর্বোচ্চ সংযোগ। মনোযোগ পূর্ণ সালাত হৃদয়কে প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ করে, হৃদয়ের অস্থিরতা, কষ্ট, রাগ, বিদ্বেষ ইত্যাদি দূর করে।
--ঈমানের পরে মুসলিমের সবচেয়ে বড় করণীয় নিয়মিত সালাত আদায় করা। নামায পরিত্যাগকারী কখনোই মুসলিম বলে গণ্য হতে পারে না। যে ব্যক্তি মনে করে যে নামাজ না পড়লেও চলে বা কোন নামাজীর চেয়ে কোনো বেনামাজী ভালো হতে পারে সে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে কাফের। প্রসিদ্ধ চার ইমাম সহ মুসলিম উম্মাহর সকল ইমাম ও ফকীহ এ বিষয়ে একমত।
জামাত:
--ওমর রা: বলেন সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেয়ে ফজরের সালাত জামাতে আদায় করাকে আমি বেশি ভালোবাসি ও ভালো মনে করি।
--নিয়মিত জামাতে সালাত আদায় করতে পারা মুমিনের অন্যতম কারামত। আউলিয়ায়ে কেরাম জামাতে সালাত আদায়কে বেলায়াতের পরিচয় মনে করেছেন। তারা বারবার বলেছেন যদি কাউকে পানির উপর দিয়ে হেঁটে যেতে, বাতাসে উড়ে যেতে দেখো তাহলে তাকে ওলী ভেবো না কিন্তু যদি কাউকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ঠিকমতো জামাতে আদায় করতে দেখো তাহলে তাকে ওলী জানবে।
--রাসূল সা: নিজে এবং সাহাবীগণ কখনোই কঠিন ওজর ছাড়া জামাত ত্যাগ করেননি জামাতে অনুপস্থিত থাকাকে তারা নিশ্চিত মুনাফিকের পরিচয় বলে জানতেন। যারা জামাতে শরিক হয় না রাসুল সা: তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।
১৮.কয়েকটি ফিকহী মতভেদ ও বিদআত ঝগড়া:
সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় হস্তদ্বয় রাখার স্থান, সূরা ফাতিহার পর আমীন বলার ক্ষেত্রে আস্তে বা জোরে বলা, রুকুতে যাওয়ার, রুকুতে থেকে ওঠার এবং তৃতীয় রাকাতে ওঠার সময় হস্তদ্বয় উত্তোলন করা, সাজদা করার সময় এবং উঠে দাঁড়ানোর সময় হাঁটু অথবা হাত আগে নামানো বা উঠানো, দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকাতে দাঁড়ানোর আগে সামান্য বসা, শেষ বৈঠকে বসার সময় ডান পায়ের বা নিতম্বের উপর বসা,নারী ও পুরুষের সালাত পদ্ধতির পার্থক্য, জামাতে সালাত এর ক্ষেত্রে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কোরআন পাঠ, সালাতুল ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর, সালাতুল জানাযা সুরা ফাতেহা পাঠ ও সালাতুল বিতর পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে মতভেদ বিদ্যমান।
লক্ষণীয়:
-প্রতিটি বিষয়ে উভয় মতের পক্ষে হাদিস বিদ্যমান।
-সাহাবী তাবিয়ীগণ ও ইমামগণ এগুলোর ক্ষেত্রে একটি কর্মকে উত্তম বলেছেন কিন্তু বিপরীত কর্মকে কখনই নিষিদ্ধ বলেননি।
-তারা এগুলো নিয়ে মতভেদ করেছেন, নিজের পক্ষে প্রমাণ পেশ করেছেন, কিন্তু কখনোই ভিন্নমতের অনুসারীকে অবজ্ঞা করেননি।
-মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পাঠ ছাড়া অন্য সকল বিষয়ের মতভেদ নফল মুস্তাহাব বা উত্তম অনুত্তম পর্যায়ের।
-বর্তমানে ধার্মিক মুসলিমগণ একে অপরকে এ বিষয়গুলো নিয়ে অবজ্ঞা,উপহাস, অবমূল্যায়ন ও ভয়ঙ্কর শত্রুতায় লিপ্ত হয়ে পড়েন।
যারা সহিহ হাদিস পালন করতে চান তাদের অন্তর সহিহ হাদিস অনুসারে প্রশস্ত হওয়া জরুরী। যে সকল বিষয়ে একাধিক সহিহ বা হাসান হাদিস বিদ্যমান সে সকল বিষয়ে ভিন্নমত কে কটাক্ষ করার অর্থ রাসূল সা: সাহাবীগণের প্রমাণিত সুন্নাহকে কটাক্ষ করা। সহীহ হাদীসকে সহীহভাবে পালন করা প্রয়োজন। রাসূল সা: যে কর্মকে যতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি বা কম গুরুত্ব দেয়া বিদআতের পথ।
১৯.আল্লাহর জিকিরের জন্য সালাত:
-আল্লাহর স্মরণ ও তার কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে হৃদয়কে পবিত্র, পরিশুদ্ধ, আবিলতা মুক্ত ও ভার মুক্ত করার জন্য সালাত।
-আল্লাহর স্মরণ বা জিকির হলো সালাতের মূল বিষয়। হৃদয়হীন স্মরণহীন নামাজ মুনাফিকের নামাজ।
-দুঃখজনক বিষয় হলো আমরা নামাজের অন্যান্য প্রয়োজনীয়, অল্প প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় অনেক বিষয়ে সচেতন হলেও মনোযোগ, আবেগ ও ভক্তির বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায় না।
২০.সালাতের অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
-রাসূল সা: এর শেখানো পদ্ধতি অনুসারে আমাদের সালাত আদায় করতে হবে।
-মুমিনের উচিত মহান প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পছন্দনীয় পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পোশাক পরিধান করা।
-নামাজের সবকিছু হৃদয় দিয়ে অনুভব করে ও বুঝে পাঠ করতে হবে, না বুঝে আন্দাজে বা অমনোযোগের সাথে নয়।
-ফরজ নফল সকল সালাতের মধ্যে কোরআনের দোয়া বা কুরআনের অর্থবোধক দোয়া পাঠ করাকে ইমাম আবু হানিফা সুন্দর বা উত্তম বলেছেন। সুন্নত নফল তাহাজ্জুদ ইত্যাদি সালাতের শুরুতে, তেলাওয়াতের সময়ে, রুকুতে, সেজদায় ও তাশাহুদের পরে বেশি বেশি করে দোয়া করতে হবে।
-সকল সুন্নত নফল নামাজ মসজিদে আদায় করা জায়েজ কিন্তু বাড়িতে পালন করা উত্তম।
-আমরা সাধারণত এশার সালাতের সাথে বিতির আদায় করি এতে দোষ নেই তবে যারা শেষ রাতে উঠতে পারবেন না তাদের উচিত রাত ১০টা বা ১১ টায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় সম্ভব হলে কয়েক রাকাত নফল আদায় করে বিতির আদায় করা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :সবগুলো বিষয়েই রেফারেন্স আছে আমি আসলে যেহেতু সামারি তৈরি করছি সে ক্ষেত্রে আমি রেফারেন্স টা দিলে আমার লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে এজন্য আমি রেফারেন্সগুলো এভোয়েড করছি, আপনারা বিস্তারিত চাইলে বইটি পড়তে পারেন,লিংক দিয়ে দিচ্ছি । চলবে---- ইনশাআল্লাহ
https://www.rokomari.com/book/75371/rahe-belayat
No comments:
Post a Comment